২৭ বার পঠিত
পাবনায় প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া এনজিও ‘সৃজনী বাংলাদেশ’
মাসুদ রানা,পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহরে সেলাই ও হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণের ঋণ দিয়ে গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলে দেওয়াসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ নামে এক ভুয়া এনজিওর বিরুদ্ধে। এতে প্রায় ৩ শতাধিক গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সোমবার সকালে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের উথূলী গ্রামের ওই ভুয়া প্রতিষ্ঠানে এসে তালাবদ্ধ দেখে শতাধিক নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করে। পরে ওই বাড়ির মালিকের ওপর চড়াও হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঈদের আগে প্রতারণার শিকার হয়ে এ সময় শতাধিক নারী-পুরুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, মাসখানেক আগে উথূলী গ্রামের নিত্যানন্দ মৌয়ালীর বাড়ি ভাড়া নেয় ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর লোকজন। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় এনজিওর কর্তাব্যক্তিদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে কয়েকদিন পর দেওয়ার কথা বলা হয় বাড়ির মালিককে। পরে ওই এনজিওর ম্যানেজারসহ কয়েকজন মাঠকর্মী পৌরসভাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন থেকে সদস্য সংগ্রহ করা শুরু করে। সেই সঙ্গে সদস্য ফি বাবদ ২৫০ টাকা করে নগদ টাকা নেওয়া হয়।
শুধু কি তাই, প্রত্যেক সমিতির সভাপতিকে দিয়ে নিজেদের নামে মোবাইলের সিম কার্ড তুলে নেন ওই এনজিওর লোকজন। ওই সিমকার্ড দিয়ে প্রত্যেক গ্রাহকের সঙ্গে এনজিওর মাঠকর্মীরা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এরপর সদস্যদের চাহিদা মতো ১ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩ শতাধিক সদস্যের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া বাবদ জমা নেওয়া হয়। এদিকে প্রত্যেক সদস্যকে সোমবার ঋণ দেওয়ার কথা বলে অফিসে আসতে বলা হয়। সোমবার সকালে অফিস তালাবদ্ধ দেখে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে বিক্ষোভ করতে থাকেন প্রতারণার শিকার শতাধিক-নারী পুরুষ। পরে ক্ষুব্ধ লোকজন বাড়ির মালিকের ওপর চড়াও হলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ পৌঁছানোর পর ওই ভুয়া এনজিওর অফিস রুমে প্রবেশ করে গ্রাহকদের পরিচয়পত্র ও ছবি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। বাড়ির বাইরে দেয়ালে ছোট্ট একটা ব্যানার লাগানা আছে। ব্যানারে লেখা আছে, ‘সৃজনী বাংলাদেশ’। মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রাম (এমএফপি)। এম আর এ সনদ নং- ০০২৪৫/০০১২২ (ক) ০০১২২। তবে এনজিও সংশ্লিষ্ট কারো নামা জানা সম্ভব হয়নি।
প্রতারণার শিকার আটংলংকা গ্রামের মুসলিমা খাতুন, শীলা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঈদের আগে ধার করে ১০ হাজার করে জমা দিয়েছিলাম ঋণের আশায়। ভেবেছিলাম গরু কিনবো। পরিশ্রম করে আস্তে আস্তে পরিশোধ করবো টাকা। কিন্তু মিষ্টি কথায় এমন সর্বনাশ হবে ভাবতেও পারিনি। এখন ধারের টাকা শোধ করবো কীভাবে? হরিপুর গ্রামের হাফিজুল ইসলাম নামে অপর আরেকজন জানান, ঈদের আগে আমাদের মতো গরীব মানুষদের সঙ্গে এমন প্রতারণা করে আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই এর প্রতিকার চাই।
এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতারকদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি। ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহলের সরকারি মোবাইলে ফোন নাম্বারে কল দেওয়ার পর তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে এসএমএস দিয়েও সাড়া মেলেনি।